কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর), ঢাকা

কাস্টমস বন্ডের ইতিহাস:

Robert Walpole নামক ব্রিটিশ পলিটিশিয়ান ও শাসক ১৭৩৩ সালে প্রথম বন্ড ব্যবস্থার ধারণা দেন। প্রথম দিকে "এক্সাইজ স্কিম" এর আওতায় শুধুমাত্র Tobacco ও Liquor জাতীয় পণ্য বন্ডেড ওয়্যারহাউসে রাখা হতো এবং ওয়্যারহাউসে রক্ষিত পণ্য এক্সাইজ ডিউটি (Excise Duty) পরিশোধ করে অপসারণ করা হতো। তবে এ প্রস্তাব তৎকালীন সময়ে তেমনভাবে জনপ্রিয় ছিল না, তদুপরি এ ব্যবস্থা ১৮০৩ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।


১৮০৩ সালে এ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করে বন্ডেড ওয়্যারহাউসে আমদানি পণ্য সংরক্ষণ করার কার্যক্রম চালু করা হয়, সেক্ষেত্রে এখনকার মতো বন্ড দিয়ে (এখন যেটা জেনারেল বন্ড) পণ্য খালাস করে গুদামজাত করা হতো। পরবর্তীতে ভোগের নিমিত্তে শুল্ক-কর পরিশোধ করে ওয়্যারহাউস থেকে পণ্য বাহির করা হতো; যা বর্তমানের হোম কনজাম্পশন বন্ডের অনুরূপ।

বন্ডেড ওয়্যারহাউস কি?

বন্ড বা বন্ডেড ওয়্যারহাউস হলো এমন একটি সুরক্ষিত জায়গা/গুদাম/ওয়্যারহাউস যেখানে শুল্ক করাদি পরিশোধ ব্যতীত আমদানিকৃত কাঁচামাল খালাস করে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে এ কাঁচামাল দ্বারা পণ্য তৈরি/উৎপাদনপূর্বক দেশের ভৌগোলিক সীমার বাইরে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে রপ্তানি করা হয়। 

বাংলাদেশে বন্ড ব্যবস্থাপনার উৎপত্তি:

১৭৩৩ সালে ইংল্যান্ডে বন্ড ব্যবস্থাপনা চালু হলে পরবর্তীতে ব্রিটিশরাই এ উপমহাদেশে তা চালু করেন। ব্রিটিশ ও পরবর্তীতে পাকিস্থানী শাসনামলে বন্ড প্রথা প্রচলিত ছিল। তখন মূলত ব্যবসা সহজ ও সহনীয় করার লক্ষ্যেই এ বন্ড প্রথা প্রচলন করা হয়েছিল। সে সময় মূলত হোম কনজাম্পশন বন্ড প্রথা প্রচলিত ছিল। দেশ স্বাধীন পরবর্তী ১৯৮০ দশকের প্রথমদিকে এদেশে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু হয়। ঢাকার ঊর্দু রোডের রিয়াজ গার্মেন্টস এদেশের প্রথম গার্মেন্টস রপ্তানি প্রতিষ্ঠান। 


বাংলাদেশে বন্ড ব্যবস্থাপনার বিকাশ:

গার্মেন্টস ব্যবসার প্রসারের লক্ষ্যে ও অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণকল্পে রপ্তানিমুখী বন্ড প্রথা পুরোদমে চালু করা হয়। বন্ডেড ওয়্যারহাউজে যেহেতু শুল্কযোগ্য কাঁচামাল শুল্ক প্রদান ব্যতিরেকে সংরক্ষিত রাখা হয় সেহেতু পূর্বে এই বন্ড গুদামের তালা চাবি কাস্টমস ডিপার্টমেন্টের বন্ড অফিসারের (ইন্সপেক্টর, বর্তমানে: এআরও) হেফাজতে থাকত (এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে যেমন: ডিপ্লোম্যাটিক বন্ড)। পরবর্তীতে গার্মেন্টস শিল্প বন্ডের আওতায় এলে দেখা যায় গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান অফিস সময়ের পরও বন্ড ওয়্যারহাউজ থেকে কাঁচামাল বের করার প্রয়োজন হয়। একই অফিসারের অধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চাবি থাকলে তার পক্ষে একই সময়ে সব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বন্ড গুদামের তালা খুলে উপকরণ/কাঁচামাল বের করে দেয়াও কষ্টসাধ্য।

এ জটিলতা নিরসনে “স্পেশাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস” ধারণার উদ্ভব হয়। অর্থাৎ গার্মেন্টস শিল্প ও সহযোগী শিল্পের বন্ডের চাবি তাদের হাতেই থাকবে। তারা তাদের প্রয়োজনীয় মুহুর্তে বন্ড থেকে কাঁচামাল বের করে পণ্য উৎপাদন করবেন এবং তার একটি হিসাব যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবেন।


বন্ডের যাবতীয় কর্মকান্ড প্রথম দিকে কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম ও কাস্টম হাউস, ঢাকা থেকে পরিচালিত হতো। ক্রমান্বয়ে বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নভেম্বর, ২০০০ খ্রি. কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা নামে নতুন একটি কমিশনারেটের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে বন্ড কমিশনারেটের মূল অফিস ছিল ঢাকায় এবং আঞ্চলিক অফিস ছিল চট্টগ্রামে। 


বিশ্ব অর্থনৈতির পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ, দেশজ শিল্পের প্রতিরক্ষণ ও সেবা নিশ্চিতকরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের লক্ষ্যে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিম্নোক্ত নামে দুটি স্বতন্ত্র বন্ড কমিশনারেট যাত্রা শুরু করে:

(১) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা;

(২) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, চট্টগ্রাম।


পরবর্তীতে ২০২২ সালে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা- কে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়:

(১) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর), ঢাকা;

(২) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ), ঢাকা।


বন্ড ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন:

Ø ডিপ্লোমেটিক বন্ডের ওয়্যারহাউসসমূহের বন্ডিং কার্যক্রম সহজীকরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেম (dbas.cbc.gov.bd) চালু করা হয়েছে; যার মাধ্যমে ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস এর কার্যক্রমে ডিজিটাল প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রদানের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে।


Ø নন-ইনট্রুসিভ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ডেড ওয়্যারহাউস প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পাদনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বন্ড অটোমেশন সিস্টেমে ইউপি ইস্যু সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং অন্যান্য সকল কার্যক্রম অচিরেই চালু হবে। 


কাস্টমস বন্ড কার্যক্রম যেসকল ধারা, বিধি, ও এসআরও এর আওতায় পরিচালিত হয়:

১৮৭৮ সালে এ উপমহাদেশে Sea Customs Act, 1878 চালু হয়। পাকিস্তান আমলে Sea Customs Act, 1878 বাতিল করে সেই বাতিলকৃত আইনের ধারাগুলো প্রায় একই রেখে The Customs Act, 1969 জারী করা। The Customs Act, 1969 রহিত করে বিগত 2023 সালে কাস্টমস আইন, 2023 জারী করা হয়। বর্তমানে কাস্টমস আইন, 2023 এর ১6 (ষোড়শ) অধ্যায় অর্থাৎ সেকশন 108 থেকে 134 তে বন্ড ব্যবস্থাপনা তথ্য বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।  


যে সকল প্রতিষ্ঠানকে বন্ড লাইসেন্স প্রদান অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, বন্ড রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা যাইবে:

(ক) সরাসরি রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান;

(খ) প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান;

(গ) ডিপ্লোমেটিক বন্ড প্রতিষ্ঠান, ডিউটি ফ্রি বন্ড প্রতিষ্ঠান, ডিউটি পেইড বন্ড প্রতিষ্ঠান এবং কমিশনারেট;

(ঘ) সরকারি ও বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে অবস্থিত সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান;

(ঙ) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৪২ নং আইন) এর ধারা ৭ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ক)- তে উল্লিখিত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা এবং দফা (গ)- তে বর্ণিত বাণিজ্যিক এলাকায় স্থাপিত সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান; এবং

(চ) বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৮ নং আইন) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত হাই-টেক পার্কে স্থাপিত সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান।


বন্ড কমিশনারেটের প্রধান প্রধান কার্যাবলী:

(১) শিল্পবান্ধব নতুন প্রতিষ্ঠানকে বন্ড লাইসেন্স প্রদান;

(২) পূর্বের লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠান যথাযথ কার্যক্রম করছে কিনা তা মনিটরিং;

(৩) পূর্বের লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছর নবায়ন ও বার্ষিক নিরীক্ষা সম্পাদন;

(৪) প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত প্রাপ্যতা বা নতুন মেশিনের প্রাপ্যতা নির্ধারণ;

(৫) প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ, স্থানান্তর ও নতুন কাঁচামাল অন্তর্ভুক্তিকরণ;

(৫) হোম কনজাম্পশন বন্ড থেকে যথাযথ রাজস্ব আদায় নিশ্চিতকরণ;

(৬) ডিউটি ফ্রি শপ ও ডিউটি পেইড, ডিপ্লোম্যাটিক বন্ড প্রতিষ্ঠান অডিট ও মনিটরিং;

(৭) বন্ডিং মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্যের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ;

(8) পণ্য উৎপাদক উপকরণ বা সহগ এর বাইরের পণ্য বন্ড লাইসেন্স থেকে বাদ প্রদান; 

(9) রপ্তানির বিপরীতে প্রকৃত বৈ:মুদ্রা আসছে কি না তা যথাযথ মনিটরিং;

(১0) অন্যান্য।